শচীনকর্তার কণ্ঠের সুর মেখে ছড়িয়ে আছে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে।

'তোরা কে যাসরে ভাটি গাঙ বাইয়া', 'টাকডুম
টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল' এ রকম
অজস্র
জনপ্রিয় গান শচীনকর্তার কণ্ঠের সুর
মেখে ছড়িয়ে আছে কোটি কোটি মানুষের
হৃদয়ে।
বাংলার পাশাপাশি হিন্দি গানেও শচীন দেব
বর্মণ এক অবিস্মরণীয় নাম।
শচীন দেব বর্মণ কুমিল্লার ছেলে। সুনাম তার
পৃথিবী জোড়া। তার পিতা ছিলেন
ত্রিপুরা রাজপরিবারের সন্তান। শচীন দেব
বর্মণের রাজ সিংহাসনে বসার কথা ছিল।
তিনি বসলেন মানুষের হৃদয়ের সিংহাসনে। তার
অস্ত্রের নাম সুর-সংগীত।
১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর শচীন দেব বর্মণ
কুমিল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সুরের
মূর্ছনা দিয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয়
করা যোদ্ধার
জন্ম স্মৃতি আজ বিস্মৃতির পথে। কুমিল্লার
জন্য তার
অবদান বলার অপেক্ষা রাখে না, তবে তার
স্মৃতিটুকু
ধরে রাখার জন্য কোথাও কেউ নেই।
কুমিল্লা মহানগরীর চর্থা এলাকায় তার
বাসগৃহটির দেয়ালের ইট খসে পড়ছে।
পাশে সরকারি হাঁস-মুরগির খামার। তালাবদ্ধ
বাউন্ডারির ভেতরে বন্দী আছে শচীন দেব
বর্মণের
স্মৃতির চিহ্ন। এ বাড়িতে জাতীয়
কবি কাজী নজরুলও এসেছিলেন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ষড়যন্ত্র
করে ত্রিপুরা থেকে শচীন দেব বর্মণের
পিতা নবদীপ চন্দ্রকে কুমিল্লায় নির্বাসন
দেওয়া হয়। পরে তাদের বাড়ির
জমি দিয়েছিলেন
নারী জাগরণের অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা।
শচীন দেব বর্মণ ইউসুফ স্কুল, জিলা স্কুল
হয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ পাস করেন।
১৯২৪
সালে কলকাতায় এমএ ক্লাসে ভর্তি হন।
সেখানে নিবিড়ভাবে সংগীতের
সঙ্গে জড়িয়ে যান। তারপর শুধু
এগিয়ে যাওয়া। এর
আগে কুমিল্লা অধ্যায়ে ছোটবেলায় গ্রামের
পর
গ্রাম ঘুরেছেন। ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন
জল,
মাটি আর মানুষের হৃদয়ের যত গান।
১৯২৫ সালে কৃষ্ণচন্দ্র দের
কাছে সংগীতচর্চা শুরু
করেন। পরে বদল খাঁ ও ভীষ্মদেব
চট্টোপাধ্যায়ের
কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেন। বেতারে প্রথম
১৯২৬
সালে সংগীত পরিবেশন করেন। ১৯৩২
সালে হিন্দুস্থান মিউজিক্যালে প্রথম গান
রেকর্ড
করেন। ১৯৩৮ সালে মীরা ধর গুপ্তের
সঙ্গে বিয়ে হয়। বিশাল কর্মজীবনে অর্জন
করেছেন
অনেক পুরস্কার।
কুমিল্লা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক
রাজধানী নামকরণে শচীন দেব বর্মণের
অবদান বড়
মাপের। তার জন্মদিন, মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ
করা হয় না খুব একটা। তার স্মৃতিচিহ্ন
বাড়িটিও
বিলীন হওয়ার পথে। সংস্কৃতি কর্মীদের মতে,
শচীনকর্তার বাড়িটি সংস্কার করে সংরক্ষণ
করা যায়। রূপ দেওয়া যায় সাংস্কৃতিক
কেন্দ্রে।
নজরুল গবেষক ড. আলী হোসেন
চৌধুরী বলেন, নতুন
প্রজন্মের কাছে শচীন দেব
বর্মণকে তুলে ধরতে তার বাড়িটি সংস্কার
করে এখানে হতে পারে শচীন দেব সাংস্কৃতিক
চর্চা কেন্দ্র।

Comments

Popular posts from this blog

কুমিল্লার কিছু আঞ্চলিক ভাষা :

চান্দিনা উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ, চেয়ারম্যান সাহেব ও সচিবদের নাম এবং মোবাইল নাম্বার দেওয়া হইল।

অভিনেত্রী নিপুণ,কুমিল্লার মেয়ে।