প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা 'ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি'
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কুমিল্লা-
সিলেট সড়কের কোল ঘেষেই ময়নামতি সেনানিবাস
সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে অবস্থান। এ
সমাধি ক্ষেত্রের সমতল
ভুমি থেকে কিছুটা উঁচুতে থাকা এই
সমাধিক্ষেত্রে চির নিদ্রায় শায়িত
সাজানো হয়েছে চমৎকার করে। যেখানে চির নিদ্রায়
শায়িত আছেন বিভিন্ন পদবীর সেনা ও বিমান
বাহিনীর ৭৩৭ জন সৈনিক।
সমাধি সৌধ’র মূল ফটকে প্রবেশ পথের ডান
পাশে থাকা লিখিত বিবরণে জানা যায়, ১৯৪১
সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বার্মার
প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ব্রিটিশ ভারতীয় ও
স্থানীয় সৈনিকদের দুটি দুর্বল ডিভিশন সংঘটিত
করা হয় এর একটি রেঙ্গুনের দক্ষিণ দিকের প্রবেশ
পথ রক্ষা এবং অন্যটি মধ্য বার্মা বর্তমান
মিয়ানমার কে পূর্ব দিকের আক্রমণ থেকে রক্ষার
জন্য নিয়োজিত ছিল। একই সময় এ
দুটি ডিভিশনের সাথে দুটি চীনা সেনাবাহিনীও যুক্ত
হয়।
’৪১ সালের মধ্য ডিসেম্বরে টেনে সারিম বিমান
ক্ষেত্র দখলের মধ্য দিয়ে যে অক্ষশক্তি জাপানের
হামলা শুরু হয় তার উদ্দেশ্য ছিল চীন
অভিমুখে সমর সরবরাহ সড়ক বার্মা রোড বন্ধ
করে দেওয়া। জাপান এ অঞ্চলে যুদ্ধরত ছিল ১৯৩৭
সাল থেকেই। ১৯৪২ সালে মধ্য জানুয়ারীর প্রধান
আক্রমণটি ৭ মার্চ তাদের রেঙ্গুন পরিত্যাগ
অপরিহার্য করে দেয়। ১৯৪২’র ডিসেম্বরে আকিয়ার
পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শুরু হয়।
১৯৪৩ সালে পঞ্চদশতম সেনাদল আরাকান
রণাঙ্গণে আক্রমণ করে। ১৯৪৪ সালের
ফেব্র“য়ারীতে ইম্ফলের চারিদিকে কেন্দ্রীয়
রণাঙ্গন থেকে সংরক্ষিত অতিরিক্ত সৈনিকদের বের
করে আনার লক্ষ্যে পরিচালিত
জাপানি পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করে মিত্র
বাহিনী। একই বছরের মে মাসের প্রথম
দিকে জাপানীদের চুড়ান্ত আক্রমণ সংঘটিত হয়।
লক্ষ্য ছিল মিত্রবাহিনীর আক্রমণ
তৎপরতাকে পর্যুদস্ত করা।
এবং আসামে অনুপ্রবেশ করে লেডো সড়ক ও
চীনে রসদ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত বিমান
ঘাটি গুলি বিধ্বস্ত করা। ওই বছরের নভেম্বর
মাসের শেষ দিকে মিত্রবাহিনী আক্রমণ
করে উত্তর দিক থেকে আর আরাকান পঞ্চদশতম
সেনাদল অনেকগুলি সম্মিলিত
তৎপরতা সহকারে অগ্রসর হয়ে। আফিয়াব ও রামবিব
বিমান ক্ষেত্র গুলি দখল করে নেয়। ১৯৪৫ সালের ৩
মে রেঙ্গুনে বিনা বাধায় পঞ্চদশ সেনা দলের
সংগে মিলিত হয়। ভারতীয় ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর
ইতিহাসে দীর্ঘ দীর্ঘতম ১০০০ মাইল পশ্চদপসরন
দিয়ে সূচীত এই সমরাভিযান পরিণতি লাভ
করে উত্তরের পথে বার্মা বিজরা।
যদিও এই অভিযানের বিবরণ ছিল স্থল যুদ্ধের
অগ্রগতির নিরিখে তবে এটি ছিল
সর্বোতভাবে একটি সম্মিলিত স্থল ও বিমান যুদ্ধ।
এর ফলাফল চর্তুদশ ডিভিশনের (সেনাবাহিনী)
জন্য যাতাটা বিজয় বিমান বাহিনীর জন্যও ততোটা।
এ অভিযানে ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈন্য নিহত
হয়। যার মধ্যে ২৭ হাজার ছিল ভারতীয় বাহিনীর
সৈনিক।
ঐতিহাসিক এই বার্মা ফ্রন্টের যুদ্ধ নামে পরিচিত
এই যুদ্ধে নিহত সৈনিতদের
স্মৃতি সংরক্ষণে বর্তমান মিয়ানমান। ভারত ও
বাংলাদেশে ৯টি রণ সমাধি ক্ষেত্রে তৈরী করা হয়।
জানা যায়, ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় কুমিল্লায় ছিল
অত্যন্ত বৃহৎ হাসপাতাল ও সরবরাহ কেন্দ্র
এবং ১টি গুরুত্বপূর্ন বিমানঘাটি। তদুপরি ১৯৪৪
সালের অক্টোবরে ইম্ফলে স্থানান্তর হওয়ার আগ
মুহুত্ব পর্যন্ত চতুর্দশ সেনাবাহিনীর সদর দফতর।
এখানের সমাধিতে সমাহিত ৭৩৬
টি সমাধিতে প্রধানত হাসপাতালের মৃতরা।
তবে যুদ্ধের পর বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন
রণাঙ্গণে থেকে স্থানান্তরিত কিছু শবদেহ
এখানে সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশে দুটি রণ সমাধিক্ষেত্রের মধ্য
একটি ময়নামতি ওয়্যার সিমেট্টি অপরটি চট্টগ্রাম
মেডিকেল কলেজের পিছনে অবস্থিত।
সেখানে সমাধিস্থ করা হয়েছে ৭৫৫ জন বিভিন্ন পদ
মর্যাদার ভিন্ন বাহিনীর সৈনিক, অফিসারদের।
ময়নামতিতে সমাহিত প্রতিটি সমাধির উপর
পাথরে উৎকলিত রয়েছে সৈনিতদের নাম, বয়স,
পরিচয়, জাতীয়তা, প্রতিটি সমাধির স্মৃতি চিহৃর
আকার এক বর্গফুটের। থরে থরে সাজানো ওয়ার
সিমেট্রি নানা ফুলের গাছের পরিপূর্ণ। এটির
পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে কমনওয়েলথ্ গ্রেইভস
কমিশন।
তাদের নিয়োজিত ১ জন অবধায়ক ও ৪ জন
কর্মচারী এই সমাধিক্ষেত্র দেখভালোর কাজ
করছেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহুত্ব পর্যন্ত যারা পরস্পরের
শত্র“ তারা এখানে এক কাতারে শায়িত।
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি স্থানীয়ভাবে ইংরেজ
কবরস্থান হিসেবেই এখানে সমাধিক পরিচিত।
স্মৃতি সৌধটি পৃথক দু’ভাগে বিভক্ত। সামনের
অংশে মাঝে রাস্তা দুদিকে সারিবদ্ধভাবে সমাধি তারপর
কয়েকটি সিড়ি ডিঙ্গিয়ে মাথা উচু
করে দাঁড়ানো ক্রুশের চিহ্ন পিছনে মুসলিম
সৈন্যদের স্মৃতি সম
Comments
Post a Comment